দেশে চলছে এক ভয়াবহ বন্যার করুন অবস্থা। যে বন্যায় মানুষ হাহাকার করা ছাড়া কিছুই নেই। ফেনী, কুমিল্লা সহ বিভিন্ন জেলায় যে পরিমান বন্যার পানি বেড়েছিলো তা ভয়াবহ ছাড়া কিছুই বলার ভাষা কারো নেই। কোথাও কোথাও ২ তলা সমান পানি হয়ে গিয়েছিলো। বন্যার্তদের জীবন বাচানোই দায় হয়ে পড়ে। চারিদিকে পানি আর পানি। কোথাও খাবার নেই। ঠিক সেই সময় “যত বিপদ তত ঐক্য” এর মাধ্যমে সাধারণ মানুষ ঝাপিয়ে পড়ে দেখিয়ে দিলো এটাই বুঝি ছাত্র-জনতার বাংলাদেশ। কেউ গেলো জীবনের মায়া ত্যাগ করে বন্যার্তদের উদ্ধারে। কেউ গেলো ত্রাণবাহী গাড়ি নিয়ে। এমন হলো যে, ত্রাণবাহী গাড়িগুলোও আটকে গেলো। তারা যেন হাল ছাড়ার পাত্র না। জীবন বাজি রেখে উদ্ধার এবং ত্রাণ নিয়ে যে যার মতো ছুটে চললো। এর মাঝে বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা আয়োজন করে টিএসসিতে গণত্রাণ কর্মসূচী। এখানে মানুষ মনে হলো জীবন দিতে প্রস্তুত। কত ত্রাণ যে সংগ্রহ হলো যেটা ভাষায় বা সংখ্যায় প্রকাশ করার মতো না। কারো হাত নেই সেও ত্রাণ দিতে ছুটে এলো, ছোট বাচ্চারা ব্যাংকে জমানো টাকা নিয়ে ছুটে এলো। কি সুন্দর দৃশ্য। টিএসসিতে ত্রাণ রাখার জায়গা সংকট পড়ে গেলো। টাকা সংগ্রহ দিন দিন রেকর্ড করতে লাগলো। ১ কোটি ২ কোটি প্রতিদিন এভাবেই সংগ্রহ চলতে থাকলো।
ঠিক এর মাঝেই ঢাকার যাত্রাবাড়ীর ধলপুরও বিপদে সাহায্য কিভাবে করতে হয় দেখিয়ে দিলো। ঢাকার মাঝে এলাকাভিত্তিক যে ত্রাণ সরবরাহ করা হলো তার মাঝে ধলপুর অন্যতম। ধলপুর এলাকার তরুণরা ঝাপিয়ে পড়লো ত্রাণ সংগ্রহে। বন্যার প্রথম দিনেই একদল বোট নিয়ে চলে গেলো উদ্ধার অভিযানে। এদিকে এলাকার তরুণরা দিনরাত এক করে ত্রাণ সংগ্রহে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। এলাকার বিভিন্ন পেশাজীবির নিকট সাহায্য চাইলো। এতে করে সকল পেশার মানুষ তাদের সহযোগিতা করা শুরু করলো। তরুণরা বাক্স হাতে এলাকায় ত্রাণ সংগ্রহে ছুটে চললো। এর মাঝে সকলের সহযোগিতায় বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ পাঠানো শুরু করে দিলো। পানি, শুকনো খাবার, স্যালাইন, স্যানেটারি ন্যাপকিন, প্রয়োজনীয় ওষুধ, মোমবাতি, দিয়াশলাই, বাচ্চাদের দুধ, খাবার নিয়ে তারা প্রথম দিনই ১ ট্রাক ত্রাণ পাঠিয়ে বন্যার্তদের সহযোগিতা করলো। এরপর থেকে দিন রাত তরুন সমাজ ত্রাণ সংগ্রহে আপ্রাণ চেষ্টা করতে থাকলো। এবং একে একে ৪/৫ ট্রাক ত্রাণ নিয়ে বন্যার্তদের সহযোগিতায় ঝাপিয়ে পড়লো। ত্রান ক্রয়ে দোকানে গেল দোকানদাররাও যথেষ্ট সহযোগিতা করতে থাকলো। তাদের নিজের দোকান থেকেও পণ্য দেয়া শুরু করলো। সামনে আরো কয়েক ট্রাক ত্রাণ যাবে এই ধলুপর থেকে। এখনো চলছে ত্রাণ সংগ্রহ।
ধলপুরের এমন ঐক্য আগে হয়তো দেখা হয়নি কখনো। তারা বিপদে দেখিয়ে দিলো- “যত বিপদ তত ঐক্য”। যেভাবে তারা সরকার পতনের পর এলাকা পাহারা দিলো। রাত জেগে ডাকাতদের হাত থেকে এলাকা রক্ষা করলো। সত্যি বলতে, হয়তো এটাকেই বলে ছাত্র-জনতার বাংলাদেশ। হয়তো এমন বাংলাদেশই আমরা চেয়েছিলাম। ধলপুরের এ ঐক্য যেন কখনো ফাটল না ধরে। তাহলেই ধলপুর এক সময় মডেল এলাকায় পরিণত হতে সময় লাগবে না।