রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ মোড় বিজয় সরণির সিগন্যাল। গত বুধবার সকালে সরেজমিনে দেখা যায় যে ট্রাফিক পুলিশ সদস্য শফিক হাত দিয়ে গাড়ি থামানোর ইশারা দিচ্ছেন। কিন্তু তার পরও তার ইশারা উপেক্ষা করে প্রায় ১০টি গাড়িকে চলে যেতে দেখা গেল। বাধ্য হয়ে তিনি ত্যক্ত-বিরক্ত হয়ে কোমরে দুই হাত দিয়ে সড়কের মাঝে দাঁড়ালেন। যারা জোর করে যেতে চাচ্ছিলেন, তাদের কয়েকজনকে হইচই করতে দেখা গেল। একটি প্রাইভেট কার থেকে এক ভদ্রলোক নেমে এলেন। ট্রাফিক পুলিশের কাছে গিয়ে জানতে চাইলেন, কেন তার গাড়িটিকে যেতে বাধা দেওয়া হলো। দূরে দাঁড়িয়ে নীরবে দৃশ্যটি দেখলেন কর্তব্যরত এক পুলিশ সার্জেন্ট। এমন চিত্র ঢাকার প্রায় সিগন্যালে এখন দেখা মিলছে।
বিশেষ করে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর পুলিশের মনোবলে চিড় ধরার কারণে এমন ঘটনা ঘটছে বলে পুলিশের মাঠপর্যায়ে দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। তারা জানান, ট্রাফিক পুলিশ যদি পথচারীদের আইন মানাতে যান, তখন দেখা যায় অনেকেই পুলিশের দিকে তেড়ে আসছেন। অনেক গাড়ির মালিক ছাত্রদের ডাকার হুমকি দিচ্ছেন। কেউ কেউ আবার জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের পুলিশকে লক্ষ করে টিপ্পনি কাটছেন।
এ ছাড়া ফুটপাত দিয়ে মোটরসাইকেল চালানো, মূল সড়কে ব্যাটারিচালিত রিকশার দৌরাত্ম্য, হাইড্রোলিক হর্ন বাজানো, লাইসেন্সবিহীন গাড়ি চলাচলের কারণে সড়কে শৃঙ্খলা আসছে না। এতে পুলিশের মধ্যে হতাশা সৃষ্টি হচ্ছে।
বুধবার দুপুরে রাজধানীর পান্থপথের সার্ক ফোয়ারা মোড়ে গিয়ে দেখা গেছে, সড়কে প্রচণ্ড যানজট। এর মধ্যে দেখা গেল কিছু মোটরসাইকেল ফুটপাতের ওপরে উঠে গন্তব্যে যাচ্ছে। এ সময় পুলিশের দুই সার্জেন্ট সার্ক ফোয়ারা মোড়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন। কিছু দূর এগিয়ে কারওয়ান বাজারের স্টার হোটেলের সামনে দেখা যায়, কয়েকটি মোটরসাইকেল উল্টোপথে আসছে। একটি ইজিবাইককেও উল্টোপথে আসতে দেখা গেল। কিছু দূরে ছিলেন ট্রাফিকের এক সার্জেন্ট। তাকে নীরব থাকতে দেখা গেল। রাজধানীর বাড্ডা, গুলশান, খিলক্ষেত, মগবাজার, গুলিস্তান এলাকার সিগন্যালেও এমনভাবে ট্রাফিক আইন লঙ্ঘন করতে দেখা গেছে।
সরেজমিনে পান্থপথের মোড়ে দেখা যায়, ট্রাফিক পুলিশ আরমান হাতের ইশারা দিয়ে গাড়ি থামাচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘যারা ট্রাফিক আইন লঙ্ঘন করছেন তাদের কিছু বললে উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করেন। আমরা ধৈর্য ধরে দায়িত্ব পালন করছি।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শাহবাগ মোড়ে এক সার্জেন্ট বলেন, ‘এখন সড়কে দায়িত্ব পালন করা বড় কঠিন কাজ। লোকজন আমাদের নানা কথা শোনায়। ৫ আগস্টে সরকার পতনের পর এমন পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হচ্ছে। আমরা খুব ভারাক্রান্ত মন নিয়ে চাকরি করছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘চাকরির স্বার্থে কাউকে তেমন কিছু বলি না। তবে মাঝে মাঝে কঠোর হচ্ছি।’
বুধবার বেলা ৩টার দিকে পল্টন মোড়ে গিয়ে দেখা যায়, চৌরাস্তার চারপাশে গাড়ির জট লেগেছে। অনেক মোটরসাইকেলকে দেখা গেল ট্রাফিক আইন অমান্য করে চলে যাচ্ছে। ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা কাউকে কাউকে পেছনে যাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন।
ডিএমপি জানিয়েছে, ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর প্রায় ছয় দিন ট্রাফিক পুলিশ বিভিন্ন আতঙ্কের কারণে সড়কে দায়িত্ব পালন করেনি। পরে তারা দায়িত্বে ফিরে এসেছে। দ্রুতই সড়কে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে বলে তারা আশা প্রকাশ করেছেন। ডিএমপি ঢাকা দুই সিটি করপোরেশনের প্রতি অনুরোধ করেছে, ঢাকার বিভিন্ন স্থানে যে খোঁড়াখুঁড়ির কাজ হচ্ছে, তা দ্রুতই শেষ করতে।
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) খন্দকার নাজমুল হাসান জানান, সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে পুলিশ কাজ করছে।
গাড়িচালকরা কেন ট্রাফিক আইন লঙ্ঘন করছেন বিষয়টি জানতে এই প্রতিবেদক কাকরাইল মোড়ে ৬ নম্বর পরিবহনের চালক সোহেলের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি জানান, তারা ট্রাফিক আইন মানছেন। তবে ট্রাফিক পুলিশ আগের মতো কড়াকড়ি করে না। ফলে অনেকেই আইন মানেন না। কেন কড়াকড়ি করে না- এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, সেই বিষয়টি তিনি বলতে পারবেন না।