
সকেল হোসেন, স্টাফ রির্পোটারঃ
জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার গোপিনাথপুর ইন্সটিটিউট অব হেলথ্ টেকনোলজি (আইএইচটি)তে শিক্ষক সংকট, ল্যাবরেটরি ও ফার্মেসির প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি না থাকায় প্রতৃক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। শিক্ষক না থাকায় নিয়মিত হয়না ক্লাস। এতে সম্পন্ন হচ্ছে না শিক্ষার্থীদের সীলেবাস। সেই সাথে অর্থনৈতিক কোড না পাওয়ায় দীর্ঘদিন ধরে চলমান সংকট ও সমস্যা নিয়েই খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলছে প্রতিষ্ঠানের পাঠদান ও প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রম। শিক্ষার্থীদের ভরসা হয়ে দাড়িয়েছে অতিথি শিক্ষকরা। আইএইচটিতে পুরোদমে শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করে দ্রুত জনবল নিয়োগের পাশাপাশি সব ধরেন সংকট সমাধানের দাবি শিক্ষার্থীদের
ওই প্রতিষ্ঠানে গিয়ে দেখা যায়, শ্রেণিকক্ষে শিক্ষকের অপেক্ষায় রয়েছে শিক্ষার্থীরা। ৩ জন শিক্ষক পর্যায়ক্রমে প্রতিটি শ্রেণিতে কমবেশি করে পাঠদানের চেষ্টা করছেন। পরিচর্যার অভাবে ভবনের বাহিরে ও দেওয়ালে জন্ম নিয়েছে নানা পরগাছা। ছাত্র-ছাত্রীদের অবাসিক ভবনেরও রয়েছে নানা সমস্যা।
প্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা গেছে, দুটি বিভাগে (ল্যাবরেটরী ও ফার্মেসী) প্রথম ভর্তি কার্যক্রম শুরু হয় ২০২০-২০২১ শিক্ষাবর্ষে। প্রথম পাঠদান শুরু হয় ২০২২ সালের ৩ মার্চ। ৪টি শিক্ষাবর্ষের দুটি বিভাগে মোট ৩৩৫ জন শিক্ষার্থী (ছাত্র ১৬৯ ও ছাত্রী ১৬৬) ভর্তি হয়েছে। প্রতিষ্ঠানে ১৩৬ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর পদ থাকলেও সকল পদই রয়েছে শূন্য। মোট শিক্ষার্থীর বিপরীতে রয়েছে ৬জন অতিথি প্রভাষক। যথাযথ সম্মানী না পাওয়ায় ও নানা কারণে সেই সকল অতিথি প্রভাষকও নিয়মিত আসেন না প্রতিষ্ঠানে। ফাঁকা রয়েছে অধ্যক্ষের পদটিও। তবে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করছেন জেলা সিভিল সার্জন। জেলার বিভিন্ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে সংযুক্তিতে রয়েছে ৬ জন কর্মচারী। ২ জন বাবুর্চি ও ১ জন আয়া দিন হাজিরার ভিত্তিতে কাজ করে। অর্থনৈতিক কোড না থাকায় জনবলের পদ সৃজন হয়নি। শিক্ষার্থীদের ভর্তির টাকায় প্রতিষ্ঠানের ব্যয় নির্বাহ হচ্ছে। অর্থনৈতিক কোডের জন্য সর্বশেষ এবছরের এপ্রিল মাসে আবারও আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে কোন সাড়া মেলেনি।
শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে বলেন, অধ্যক্ষ না থাকায় ও শিক্ষক স্বল্পতা তাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা। তাদের অন্যতম ভরসা হয়ে দাড়িয়েছে অতিথি শিক্ষরা। অতিথি শিক্ষক না আসলে হয়তো পাঠদান একেবারেই বন্ধই হয়ে যেত। অল্প সংখ্যক যে সকল শিক্ষক রয়েছেন তারাও অনেক সময় প্রতিষ্ঠানিক কাজে ব্যাস্ত থাকায় তারা নিয়মিত ক্লাসে আসতে পারেনা। ল্যাবে নেই প্রয়োজনীয় সংখ্যক যন্ত্রাংশ। এতে ব্যাহত হচ্ছে তাদের শিক্ষা কর্যক্রম। যথাযথ নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকায় নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে ছাত্রীরা। আবাসিক ভবনে পর্যাপ্ত আসবাপত্র না থাকায় মেঝেতে থাকতে হচ্ছে অনেক শিক্ষার্থীদের।
আশাদুজ্জামান ইমন নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, আমরা এখানে পড়াশুনা করতে আসছি। শিক্ষকের অভাবে আমরা সকল ক্লাস করতে পারিনা। আসবাব ও ল্যাবেরটরির যন্ত্রপাতি না থাকায় ব্যবহারিক ক্লাস করার কোনো সুযোগ নেই তেমন। আমরা আমাদের লেখাপড়া নিয়ে চরম দুশ্চিন্তা ও হতাশার মধ্যে সময় পার করছি।
সাব্বির হোসেন নামের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের যথেষ্ট পরিমাণ শিক্ষক সংকট রয়েছে। হাতে কলমে ভালোভাবে শেখার কোন পরিস্থিতি নেই। অথিথি শিক্ষকারা ভালো সুযোগসুবিধা না পাওয়ায় তারাও আসতে চায়না। ছাত্রছাত্রীদের কথা বিবেচনা করে আমাদের সব সমস্যা দ্রুত সমাধান হওয়া প্রয়োজন।
স্নেহা নামের এক ছাত্রী জানায়, শিক্ষক কম থাকার পাশাপাশি আমাদের আবাসিক হলে অনেক সমস্যা রয়েছে। আমাদের অনেক ছাত্রীকে মেঝেতে থাকতে হয়। কর্মচারী সংকটের কারণে আমাদের নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে থাকতে হয়। অবাসিকের আশেপাশে পরিষ্কার না থাকায় ভেতরে পোকামাকড় ঢোকার ভয় সবসময় থাকে। আমি সমস্যা সমাধানের জন্য সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
ওই প্রতিষ্ঠানের প্রধান সহকারী হাসিবুল হাসান বলেন, আমাদের প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে নিয়মিত কোন অধ্যক্ষ নেই। আমি সহ আরও যারা রয়েছি তারা প্রত্যেকেই অন্যান্য প্রতিষ্ঠান থেকে প্রেষণে দায়িত্ব পালন করছি। পর্যাপ্ত শিক্ষক ও কর্মচারী সংকট রয়েছে। এতে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি আমাদেরও অনেক ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। সংকটের কারণে অফিসের কয়েক জনের কাজ আমাকে একা করতে হয়। আমার মতো প্রত্যেককে অন্যের কাজ বাধ্য হয়ে একাই করতে হয়। এতে আমরা কাজ করতে হিমশিম খাচ্ছি প্রতিনিয়ত। দ্রুত আমাদের স্থায়ী সমাধান দরকার।
জনবল সংকটের কারণে পাঠদান ও একাডেমিক কার্যক্রম ব্যহত হচ্ছে জানিয়ে ফার্মাসিস্ট ইয়াজিজ আলী বলেন, আমাদের প্রতিষ্ঠানের বর্তমান দায়িত্বপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সিভিল সার্জনকে আমাদের সকল সমস্যার বিষয়ে জানিয়েছি। তিনিও বিষয় গুলি নিয়ে কাজ করছেন।
জেলা সিভিল সার্জন ও এই প্রতিষ্ঠানের বর্তমান দায়িত্বপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ডা. মুহা. রুহুল আমিন বলেন, ইন্সটিটিউট অব হেল্থ টেকনোলজি প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক ও অন্যান্য জনবল সংকটের কারণে একটা অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টি সম্পর্কে আমরা অবগত। এই বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপের জন্য আমরা স্বাস্থ্য বিভাগে জনবল নিয়োগের জন্য তাগিদ দিয়েছি। আশা করছি সমস্যা গুলো খুব দ্রুত সমাধান হবে।