জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারির পর গতকাল সকাল থেকে সেনাবাহিনীর কমিশনপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা তাদের টিম নিয়ে মাঠে কাজ করছেন। ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা নিয়ে সারা দেশে মাঠ পর্যায়ে দায়িত্ব পালন করছেন সেনাবাহিনীর সদস্যরা। ফলে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতাপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে কোনো অপরাধ সংঘটিত হলে তারা সরাসরি অপরাধীকে গ্রেপ্তার করতে বা গ্রেপ্তারের নির্দেশ দিতে পারবেন। আগামী দুই মাসের জন্য নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা নিয়ে মাঠ পর্যায়ে কাজ করবেন সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারা।
মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, সেনাবাহিনীর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা ‘ফৌজদারি কার্যবিধির বিভিন্ন ধারার অপরাধগুলো বিবেচনায় নিতে পারবেন। ওয়ারেন্ট অনুমোদন করার ক্ষমতা বা ওয়ারেন্টের অধীনে গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিকে অপসারণের আদেশ দেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। সরাসরি তল্লাশি করার ক্ষমতা, সার্চ ওয়ারেন্ট জারি করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। জামিনের নিষ্পত্তি করার ক্ষমতাও থাকবে। বেআইনি সমাবেশ ছত্রভঙ্গ করার আদেশ দানের ক্ষমতা, ছত্রভঙ্গ করতে সামরিক-বেসামরিক শক্তি ব্যবহার করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় উপদ্রব নিয়ন্ত্রণে ক্ষেত্র বিশেষে ব্যবস্থা হিসেবে আদেশ জারি করার ক্ষমতাও রয়েছে। উল্লিখিত ক্ষমতা ছাড়াও মোবাইল কোর্ট আইন, ২০০৯ এর অধীনে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করার জন্য সরকার এবং সেই সঙ্গে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট দ্বারা সংশ্লিষ্ট এখতিয়ারের মধ্যে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। অভিযুক্তের স্বীকারোক্তির পর ম্যাজিস্ট্রেট সংশ্লিষ্ট আইন অনুযায়ী অপরাধীকে সাজা দিতে পারবেন। তবে কারাদন্ডের ক্ষেত্রে তা দুই বছরের বেশি হবে না।
এদিকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত লে. জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কমিশনপ্রাপ্ত অফিসারদের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতার সুফল দেশের জনগণ ভোগ করবে। গতকাল গাজীপুরের সফিপুরে এক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ মন্তব্য করেন তিনি। উপদেষ্টা বলেন, সেনাবাহিনী অনেক দিন ধরে মাঠে থেকে জনগণের সেবায় কাজ করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোতে জনবলের স্বল্পতা রয়েছে। সেটা পূরণের লক্ষ্যেই কাজ করছে সেনাবাহিনী।
আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, ‘রাজধানীসহ সারা দেশে সেনাবাহিনীকে বিশেষ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা দিয়েছে সরকার। দেশের কিছু কিছু অঞ্চলে বিশেষ করে শিল্পাঞ্চলগুলোতে নাশকতা, অরাজকতা এবং দেশের স্থিতিশীলতা বিনষ্ট করার মতো কিছু কর্মকান্ড ঘটছে বলে আমরা লক্ষ্য করেছি। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার দেওয়া হয়েছে এই পরিস্থিতির উন্নয়নের জন্য। এসব অপতৎপরতা রুখে দেওয়ার জন্য, মোকাবিলা করার জন্য।’ এছাড়াও সেনাবাহিনী দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে এর কোনো অপপ্রয়োগ ঘটবে না বলে আশাবাদী আইন উপদেষ্টার।
অন্যদিকে, তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেছেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ধীরে ধীরে উন্নতির দিকে যাচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যেন দ্রুত সময়ের মধ্যে ঠিক হয়ে যায় সেজন্য সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। গতকাল সচিবালয়ে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ড ও জুরি বোর্ডের নবনির্বাচিত কমিটির সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম আরও বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যেন দ্রুত সময়ের মধ্যে ঠিক হয়ে যায়, জননিরাপত্তা যেন নিশ্চিত হয়, আমরা যেহেতু একটি জরুরি পরিস্থিতিতে আছি, দেশ পুনর্গঠন করা লাগছে, সেহেতু সেনাবাহিনীকে এ ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।
গতকাল বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোখলেস উর রহমান বলেছেন, মানুষ যেন আরও জনবান্ধব পরিবেশে চলাচল করতে পারে, আরও নিরাপদ বোধ করে, সে কারণে সেনাবাহিনীকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।
সচিব আরও বলেন, গত ৫ আগস্টের পর থেকে সব পর্যায়ের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মাঠে কাজ করছে। সব বাহিনী একই সঙ্গে একই ছাতার নিচে কাজ করছে, এই মেসেজটার জন্যই এ ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, সরকার মনে করছে বিস্তৃত পর্যায়ে মাঠের বিভিন্ন জায়গায় আমাদের সেনাবাহিনী কাজ করছে। তারা মনে করেছে, এটা হলে জনগণ আরও নিরাপদ বোধ করবে।