ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে চোর সন্দেহে ‘গণপিটুনিতে’ এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে, যিনি ‘মানসিক ভারসাম্যহীন’ ছিলেন বলে জানিয়েছেন তার এক বন্ধু।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলের অতিথি কক্ষে বুধবার রাতে ৩২ বছর বয়সী তোফাজ্জল হোসেন নির্যাতনের শিকার হন।
ঢাকা মেডিকেল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. ফারুক বলেন, “রাত ১২টার দিকে কয়েকজন শিক্ষার্থী ওই যুবককে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যাওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তিনি মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন ছিলেন।“
তার কী হয়েছিল, এমন প্রশ্নের উত্তরে পুলিশ কর্মকর্তা ফারুক বলেন, "ফজলুল হক হলে তোফাজ্জলকে চোর সন্দেহে আটক করে মারধর করা হয়। তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম ছিল।”
তার মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়েছে।
নিহত তোফাজ্জলের বাড়ি বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার কাঠালতলী ইউনিয়নে।
ঢাকা মেডিকেল মর্গে তার লাশ শনাক্ত করেন বন্ধু বেলাল গাজী।
বেলাল বলেন, “বরিশাল বিএম কলেজ থেকে অ্যাকাউন্টটিংয়ে মাস্টার্স করলেও মানসিক সমস্যার কারণে তোফাজ্জল কোনো কাজকর্ম করছিল না।
“গত ৩-৪ বছর ধরে তার এই মানসিক সমস্যা দেখা দেয়। এরপর থেকে ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় ভবঘুরের মত বেড়াত সে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশেও থাকত অনেক সময়।”
কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, বুধবার সন্ধ্যায় চোর সন্দেহে তোফাজ্জলকে আটকের পর তাকে গেস্টরুমে নিয়ে যান শিক্ষার্থীরা। সেখানে রাত ১০টা পর্যন্ত দফায় দফায় মারধর করা হয়।
পিটুনির পর ক্যান্টিনে নিয়ে খাবারও খাওয়ানো হয় তোফাজ্জলকে এবং সেই ছবি ফেইসবুকে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। এরপর আবার চলে দীর্ঘ জেরা আর মারধর।
পরে অবস্থার অবনতি হলে রাত ১২টার দিকে তোফাজ্জলকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসক তোফাজ্জলকে মৃত ঘোষণা করার পর তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া শিক্ষার্থীরা সেখান থেকে সরে যান।
তোফাজ্জলের মৃত্যুর খবরটি সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়লে এই নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়েছে। এই ঘটনায় দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিও দাবি করেছেন অনেকে।